সুস্থ থাকতে লাভে শরীর-মন—দুটোকেই খেয়াল রাখা। নিচে জীবনযাপনের মূল দিকগুলো দিয়েছি, যাতে ধারাবাহিকভাবে মানলে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থতা ধরা রাখা সহজ হয় ।
১. খাদ্যাভ্যাস
- প্লেটের অর্ধেক সবজি-পাতা: রঙিন শাক-সবজি, ফল, ডাল-শস্য—ফাইバー ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট জোগায়।
- সঠিক প্রোটিন: মাছ, ডিম, ছোলা, মুগ-ডাল, দুধ-দই—প্রতিদিন মোট ওজনের গড়ে ০.৮–১ গ্রাম/কেজি।
- খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কমান: সফট ড্রিঙ্ক, প্যাকেট চিপস, প্রসেসড মিটে লুকানো চিনি/লবণ বেশি থাকে।
- পর্যাপ্ত পানি: দিনে ২.৫–৩ লিটার; গরমে বা ব্যায়াম করলে আরও বেশি।
- সময় মেনে খাওয়া: রাত ১০টার আগে হালকা ডিনার, নিয়মিত সেহরি-ইফতার টাইপ খাবার এড়িয়ে ছোট ছোট ৪–৫ বেলা খেতে পারেন।
২. শরীরচর্চা
- এ্যারোবিক: brisk walking, সাইক্লিং, সাঁতার—সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট (দিনে ৩০ মিনিট, ৫ দিন)।
- বল-ব্যায়াম: স্কোয়াট, লাঞ্জ, ফ্রি-ওয়েট—সপ্তাহে ২–৩ দিন; পেশি-হাড় শক্ত রাখে।
- স্ট্রেচিং/যোগ: প্রতিদিন ১০–১৫ মিনিট; ফ্লেক্সিবিলিটি ও মানসিক প্রশান্তি।
- বসে থাকার দূরত্ব: প্রতি ৩০ মিনিটে কমপক্ষে ১-২ মিনিট দাঁড়িয়ে/হাঁটুন।
৩. ঘুম ও বিশ্রাম
- প্রাপ্তবয়স্কদের ৭–৯ ঘণ্টা গভীর ঘুম।
- ঘুমে যাওয়ার ৬০ মিনিট আগে স্ক্রিন বন্ধ, আলো নরম।
- নির্দিষ্ট রুটিনে ঘুমাতে-ওঠা; ছুটির দিনেও বড় বিচ্যুতি না।
৪. মানসিক স্বাস্থ্য
- মাইন্ডফুলনেস/মেডিটেশন দৈনিক ১০ মিনিট স্ট্রেস-হরমোন (কর্টিসল) কমায়।
- সামাজিক যোগাযোগ: পরিবার-বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত কথা, সুযোগ পেলে আড্ডা/ভ্রমণ।
- শখ বাড়ান: বই-পড়া, গার্ডেনিং, সঙ্গীত—মস্তিষ্কে ডোপামিন বাড়ায়।
- প্রয়োজনে কাউন্সেলিং/থেরাপিস্টের শরণাপন্ন হতে দ্বিধা করবেন না।
৫. অভ্যাস ও পরিবেশ
- ধূমপান ও মদ এড়িয়ে চলুন; থাকে ফুসফুস-যকৃৎ-হূদরোগের ঝুঁকি।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: রক্তচাপ, ব্লাড-সুগার, লিপিড প্রোফাইল বছরে একবার।
- সূর্যের আলো: ভিটামিন-ডি ও মুড-বুস্ট, দিনে ১৫ মিনিট সানলাইট (সানস্ক্রিন দিয়ে)।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: হাত ধোয়া, নিরাপদ খাবার সংরক্ষণ; সংক্রমণ কমে।
- দায়িত্ববান স্ক্রিন-টাইম: সোশ্যাল মিডিয়া-গেমিং সীমিত; অনিদ্রা, উদ্বেগ কমে।
৬. রুটিন বনাম নমনীয়তা
একইসঙ্গে রুটিন + ফ্লেক্সিবিলিটি দরকার। লক্ষ্য ঠিক করুন (যেমন ৮ হাজার পদক্ষেপ/দিন) কিন্তু অনিবার্য দিনগুলোতে নমনীয় থাকুন—শরীর-মনকে শাস্তি নিন না। ধারাবাহিকতাই আসল।
সংক্ষেপে: পরিমিত ও সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক শান্তি, খারাপ অভ্যাস থেকে দূরে থাকা—এই পাঁচ স্তম্ভ ধরে রাখতে পারলেই সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব। ছোট-ছোট পরিবর্তন শুরু করুন, এক-একটা অভ্যাস মাসকাল ধরে পাকা করুন—দীর্ঘপথে ফল মিলবেই। শুভকামনা!